Tuesday 17 April 2018

বেদাঙ্গ ও একটি তথ্যমূলক আলোচনা

                     

                      ॐ 卐 বেদাঙ্গ ॐ 卐

 বেদাঙ্গ কি ?
উত্তর -- বৈদিক সাহিত্যের শেষদিকে সংহিতা , ব্রাহ্মণ,  আরণ্যক ও উপনিষদের বাইরেও এক বিশাল সাহিত্য গড়ে উঠেছিল,  যার নাম বেদাঙ্গ ।। বেদ সঠিক ভাবে জানতে হলে বা বুঝতে হলে এই বেদাঙ্গের জ্ঞান অপরিহার্য এবং বাধ্যতামূলক ।।
 বেদাঙ্গ কয়টি ও কি কি ?

উত্তর -- বেদাঙ্গ হলো ৬ টি ।। সেগুলি হলো
১- শিক্ষা , ২- কল্প , ৩- ব্যাকরণ, ৪- নিরুক্ত, ৫- ছন্দ ও  ৬- জ্যোতিষ ।।

এই ছয়টি বেদাঙ্গ সম্মন্ধে বলা হয়েছে - 

শিক্ষা কল্পো ব্যকরণং নিরুক্তং ছন্দসাং চয়ঃ ।
জ্যোতিষাময়নং চৈব ষড়ঙ্গ বেদ উচ্যতে ।।

এখন এই টি বেদাঙ্গ সম্পর্কে জানা যাক ।।

★১- শিক্ষা : ছয় বেদাঙ্গের মধ্যে শিক্ষার স্থান সর্বপ্রথম ।। "শিক্ষা" তে বেদের বর্ণ , স্বর , মাত্রা ইত্যাদির যথাযথ উচ্চারণ ও প্রয়োগবিধি লিপিবদ্ধ আছে ।। বেদের বর্ণ, স্বর, মাত্রা, বল, সাম , সন্তান প্রভৃতি হলো শিক্ষার আলোচ্য বিষয় ।। সংহিতা পাঠের সঙ্গে পদপাঠের সম্পর্ক নির্দেশ করতে প্রাতিশাখ্যের উদ্ভব ।। সংহিতার প্রত্যেক শাখাতেই এইরুপ গ্রন্থ ছিল বলে "প্রাতিশাখ্য" নাম হয়েছে ।।

★২- কল্প : কল্পশাস্ত্র বৈদিক কর্মানুষ্ঠান বিষয়ক বেদাঙ্গ সূত্রাকারে রচিত কল্পশাস্ত্র নামক বেদাঙ্গ থেকে এক বিশাল সূত্র সাহিত্য গড়ে ওঠে । যার দ্বারা যাগ প্রয়োগকল্পিত বা সমর্থিত হয় , তাকে "কল্প" বলে । কল্পসূত্রে বিভাগ চারটি , যথা :

  - শ্রৌতসূত্র : যে শাস্ত্রে বৈদিক যজ্ঞের বিধানগুলি সূত্রাকারে লিপিবদ্ধ আছে , তাকে শ্রৌতসূত্র বলে ।।

  - গৃৃহ্যসূত্র : যে শাস্ত্রে গৃহস্থের করণীয় পঞ্চ মহাযজ্ঞ এবং দশবিধ সংস্কারের বিধান আছে , তাকে গৃহ্যসূত্র বলে ।। পঞ্চ মহাযজ্ঞ গুলি হলো -
 ১- ব্রহ্মযজ্ঞ বা স্বশাখার বেদাধ্যয়ন ,
 ২ - নৃযজ্ঞ বা অতিথি সেবা ,
 ৩ - দেবযজ্ঞ ,
 ৪ - পিতৃযজ্ঞ বা পিতৃপুরুষের তর্পণ এবং
 ৫ - ভূতযজ্ঞ বা পশুপাখির পালন ।।

 - ধর্মসূত্র : যে শাস্ত্রে ধর্মসম্মন্ধীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ উভয়বিধি , চতুর্বর্ণ ও চতুরাশ্রমের বিধিনিয়ম বর্ণিত আছে ।।

 - শুল্বসূত্র : যে শাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকারের যজ্ঞবেদি নির্মাণকালে ভূমির পরিমাপ করার নিয়ম বিধিবদ্ধ আছে ।।

★৩ - ব্যাকরণ : শব্দবিজ্ঞান ও ভাষানিয়ন্ত্রণের স্বতন্ত্র শাস্ত্রকে ব্যাকরণ বলে । কাত্যায়নের বার্তিকসূত্রে ব্যাকরণের পাঁচটি প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে ।।
যথা :

   রক্ষা : বেদের রক্ষার জন্য ব্যাকরণের প্রয়োজন , প্রকৃতি-প্রত্যয়, সন্ধি , সমাস , তদ্বিত , লোপ , আগম প্রভৃতি না জানলে বেদের পঠনপাঠন  লোপ পায় ।
 খ - ঊহ্য : যা ঊহ্য তা নিজে বিচার করে ঠিক করে নেওয়াকে "ঊহ্য" বলে ।
   - আগম :   কোনো প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে বাধ্যতামূলক ভাবে ব্রাহ্মণ কে ছয়টি বেদাঙ্গ সহ বেদ অধ্যয়ন করতে হবে ।
 ঘ  - লঘু লঘু হলো এমন এক বিদ্যা , যার দ্বারা সহজে এবং সংক্ষেপে ভাষা জ্ঞান অর্জন করা যায়।          
ঙ  - অসন্দেহ সন্দেহ নিরসনের জন্য ব্যাকরণের জ্ঞান প্রয়োজন । ব্যাকরণ এর প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয়ের দ্বারা পদের স্বরুপ ও অর্থ নির্ণয় করে থাকে ।।

★৪ - নিরুক্ত : ছয় বেদাঙ্গের মধ্যে নিরুক্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।। বৈদিক মন্ত্রের বিভিন্ন পদের অর্থজ্ঞানের জন্য যে শাস্ত্র , তাকে নিরুক্ত বলে । সেই কারণে নিরুক্ত কে বলে শব্দাভিধান বা মন্ত্রভাষ্য ।। নিরুক্তের রচয়িতা হলেন যাস্কাচার্য ।। এই নিরুক্ত হলো পৃথিবীতে ভাষাতত্ত্বের প্রথম নিদর্শন ।
  নিরুক্তের তিনটি কান্ড আছে । যেমন-

  ক : নৈঘন্টুক - এতে পাঁচটি অধ্যায় আছে । একে শব্দার্থ কান্ড বলে । এই নৈঘন্টুক এ একার্থবাচক অনেক শব্দ এবং অনেকার্থবাচক এক শব্দের ব্যবহার হয়েছে।।     
  খ : নৈগম - নৈগমে ছয়টি অধ্যায় আছে । যাস্কাচার্য নৈগমে বেদে প্রযুক্ত বহু শব্দের নির্ণয় করেছেন । মন্ত্রের সমস্ত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ নির্দেশ করেছেন ।।
  গ : দৈবত - দৈবতে ৬ টি অধ্যায় । এই কান্ডে যাস্কাচার্য বৈদিক দেবতাতত্ত্বের বিস্তৃত আলোচনা করেছেন , তা ছাড়াও কোনো দেবতার মন্ত্র বেদের কোন ছন্দে রচিত , সেটিও নির্ণয় এবং বিশ্লেষণ করেছেন ।।

★৫ - ছন্দ : বেদ মন্ত্র পাঠ করতে গেলে ছন্দের জ্ঞান একান্ত আবশ্যক । চতুর্বেদ এর অধিকাংশ মন্ত্র ই ছন্দোবদ্ধ । বেদ মন্ত্র  ছন্দে রচিত কারণ ছন্দ ছাড়া পদ্যের অস্তিত্ব নেই ।। বৈদিক মন্ত্রের এক এক পাদে পরিমিত অক্ষর সন্নিবেশ থেকে ছন্দের উৎপত্তি । বেদের সাতটি ছন্দ । যথা - 
গায়ত্রী (২৪ অক্ষর) , উষ্ণিক (২৮ অক্ষর) , অনুষ্টুপ (৩২ অক্ষর) , বৃহতী (৩৬ অক্ষর) , পঙ্ক্তি (৪০ অক্ষর) , ত্রিষ্টুপ (৪৪ অক্ষর) , জগতী (৪৮ অক্ষর) ।। সংহিতা, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, প্রাতিশাখ্যের শেষে , সামবেদের নিদান সূত্রে , সাংখ্যায়ন শ্রৌতসূত্রে , বিভিন্ন অনুক্রণিকাতে ছন্দের উল্লেখ আছে ।। ছন্দসূত্রের রচয়িতা হলেন পিঙ্গল মুনি ।।

৬ -জ্যোতিষ:  বৈদিক যজ্ঞের প্রয়োজনে তিথি নক্ষত্রের সেই বিশেষ অবস্থান বিচার যে শাস্ত্রে বর্ণিত তাকে "জ্যোতিষ" বলে । অহোরাত্র পক্ষ,  মাস , ঋতু , অয়ন , সংবৎসর , গণনা এবং রাশি-নক্ষত্র , অমাবস্যা , পূর্ণিমা, সংক্রান্তি প্রভৃতির বিস্তারিত আলোচনা জ্যোতিষ এর বিষয় ।। লগধের বেদাঙ্গ জ্যোতিষ, পরবর্তীতে গর্গ্য মুনির গ্রন্থ গুলি এই জ্যোতিষ এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।।

                           ॐ নমস্কার ॐ

                      Writer : Arya Rishi


No comments:

Post a Comment

“ড. শিব শক্তি নামক কাল্পনিক চরিত্র ! একটি ইসলামিক তাকিয়ার নমুনা”

                                ॐ    “ সম্মানিত পাঠক গণ আপনারা হয়তো অনলাইনে বহু ইসলামিক গ্রুপ , পেজ এসব স্থানে এই শিবশক্তি সরূপজী...

সব্বোর্চবার পঠিত