Tuesday 17 April 2018

বেদাঙ্গ ও একটি তথ্যমূলক আলোচনা

                     

                      ॐ 卐 বেদাঙ্গ ॐ 卐

 বেদাঙ্গ কি ?
উত্তর -- বৈদিক সাহিত্যের শেষদিকে সংহিতা , ব্রাহ্মণ,  আরণ্যক ও উপনিষদের বাইরেও এক বিশাল সাহিত্য গড়ে উঠেছিল,  যার নাম বেদাঙ্গ ।। বেদ সঠিক ভাবে জানতে হলে বা বুঝতে হলে এই বেদাঙ্গের জ্ঞান অপরিহার্য এবং বাধ্যতামূলক ।।
 বেদাঙ্গ কয়টি ও কি কি ?

উত্তর -- বেদাঙ্গ হলো ৬ টি ।। সেগুলি হলো
১- শিক্ষা , ২- কল্প , ৩- ব্যাকরণ, ৪- নিরুক্ত, ৫- ছন্দ ও  ৬- জ্যোতিষ ।।

এই ছয়টি বেদাঙ্গ সম্মন্ধে বলা হয়েছে - 

শিক্ষা কল্পো ব্যকরণং নিরুক্তং ছন্দসাং চয়ঃ ।
জ্যোতিষাময়নং চৈব ষড়ঙ্গ বেদ উচ্যতে ।।

এখন এই টি বেদাঙ্গ সম্পর্কে জানা যাক ।।

★১- শিক্ষা : ছয় বেদাঙ্গের মধ্যে শিক্ষার স্থান সর্বপ্রথম ।। "শিক্ষা" তে বেদের বর্ণ , স্বর , মাত্রা ইত্যাদির যথাযথ উচ্চারণ ও প্রয়োগবিধি লিপিবদ্ধ আছে ।। বেদের বর্ণ, স্বর, মাত্রা, বল, সাম , সন্তান প্রভৃতি হলো শিক্ষার আলোচ্য বিষয় ।। সংহিতা পাঠের সঙ্গে পদপাঠের সম্পর্ক নির্দেশ করতে প্রাতিশাখ্যের উদ্ভব ।। সংহিতার প্রত্যেক শাখাতেই এইরুপ গ্রন্থ ছিল বলে "প্রাতিশাখ্য" নাম হয়েছে ।।

★২- কল্প : কল্পশাস্ত্র বৈদিক কর্মানুষ্ঠান বিষয়ক বেদাঙ্গ সূত্রাকারে রচিত কল্পশাস্ত্র নামক বেদাঙ্গ থেকে এক বিশাল সূত্র সাহিত্য গড়ে ওঠে । যার দ্বারা যাগ প্রয়োগকল্পিত বা সমর্থিত হয় , তাকে "কল্প" বলে । কল্পসূত্রে বিভাগ চারটি , যথা :

  - শ্রৌতসূত্র : যে শাস্ত্রে বৈদিক যজ্ঞের বিধানগুলি সূত্রাকারে লিপিবদ্ধ আছে , তাকে শ্রৌতসূত্র বলে ।।

  - গৃৃহ্যসূত্র : যে শাস্ত্রে গৃহস্থের করণীয় পঞ্চ মহাযজ্ঞ এবং দশবিধ সংস্কারের বিধান আছে , তাকে গৃহ্যসূত্র বলে ।। পঞ্চ মহাযজ্ঞ গুলি হলো -
 ১- ব্রহ্মযজ্ঞ বা স্বশাখার বেদাধ্যয়ন ,
 ২ - নৃযজ্ঞ বা অতিথি সেবা ,
 ৩ - দেবযজ্ঞ ,
 ৪ - পিতৃযজ্ঞ বা পিতৃপুরুষের তর্পণ এবং
 ৫ - ভূতযজ্ঞ বা পশুপাখির পালন ।।

 - ধর্মসূত্র : যে শাস্ত্রে ধর্মসম্মন্ধীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ উভয়বিধি , চতুর্বর্ণ ও চতুরাশ্রমের বিধিনিয়ম বর্ণিত আছে ।।

 - শুল্বসূত্র : যে শাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকারের যজ্ঞবেদি নির্মাণকালে ভূমির পরিমাপ করার নিয়ম বিধিবদ্ধ আছে ।।

★৩ - ব্যাকরণ : শব্দবিজ্ঞান ও ভাষানিয়ন্ত্রণের স্বতন্ত্র শাস্ত্রকে ব্যাকরণ বলে । কাত্যায়নের বার্তিকসূত্রে ব্যাকরণের পাঁচটি প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে ।।
যথা :

   রক্ষা : বেদের রক্ষার জন্য ব্যাকরণের প্রয়োজন , প্রকৃতি-প্রত্যয়, সন্ধি , সমাস , তদ্বিত , লোপ , আগম প্রভৃতি না জানলে বেদের পঠনপাঠন  লোপ পায় ।
 খ - ঊহ্য : যা ঊহ্য তা নিজে বিচার করে ঠিক করে নেওয়াকে "ঊহ্য" বলে ।
   - আগম :   কোনো প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে বাধ্যতামূলক ভাবে ব্রাহ্মণ কে ছয়টি বেদাঙ্গ সহ বেদ অধ্যয়ন করতে হবে ।
 ঘ  - লঘু লঘু হলো এমন এক বিদ্যা , যার দ্বারা সহজে এবং সংক্ষেপে ভাষা জ্ঞান অর্জন করা যায়।          
ঙ  - অসন্দেহ সন্দেহ নিরসনের জন্য ব্যাকরণের জ্ঞান প্রয়োজন । ব্যাকরণ এর প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয়ের দ্বারা পদের স্বরুপ ও অর্থ নির্ণয় করে থাকে ।।

★৪ - নিরুক্ত : ছয় বেদাঙ্গের মধ্যে নিরুক্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।। বৈদিক মন্ত্রের বিভিন্ন পদের অর্থজ্ঞানের জন্য যে শাস্ত্র , তাকে নিরুক্ত বলে । সেই কারণে নিরুক্ত কে বলে শব্দাভিধান বা মন্ত্রভাষ্য ।। নিরুক্তের রচয়িতা হলেন যাস্কাচার্য ।। এই নিরুক্ত হলো পৃথিবীতে ভাষাতত্ত্বের প্রথম নিদর্শন ।
  নিরুক্তের তিনটি কান্ড আছে । যেমন-

  ক : নৈঘন্টুক - এতে পাঁচটি অধ্যায় আছে । একে শব্দার্থ কান্ড বলে । এই নৈঘন্টুক এ একার্থবাচক অনেক শব্দ এবং অনেকার্থবাচক এক শব্দের ব্যবহার হয়েছে।।     
  খ : নৈগম - নৈগমে ছয়টি অধ্যায় আছে । যাস্কাচার্য নৈগমে বেদে প্রযুক্ত বহু শব্দের নির্ণয় করেছেন । মন্ত্রের সমস্ত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ নির্দেশ করেছেন ।।
  গ : দৈবত - দৈবতে ৬ টি অধ্যায় । এই কান্ডে যাস্কাচার্য বৈদিক দেবতাতত্ত্বের বিস্তৃত আলোচনা করেছেন , তা ছাড়াও কোনো দেবতার মন্ত্র বেদের কোন ছন্দে রচিত , সেটিও নির্ণয় এবং বিশ্লেষণ করেছেন ।।

★৫ - ছন্দ : বেদ মন্ত্র পাঠ করতে গেলে ছন্দের জ্ঞান একান্ত আবশ্যক । চতুর্বেদ এর অধিকাংশ মন্ত্র ই ছন্দোবদ্ধ । বেদ মন্ত্র  ছন্দে রচিত কারণ ছন্দ ছাড়া পদ্যের অস্তিত্ব নেই ।। বৈদিক মন্ত্রের এক এক পাদে পরিমিত অক্ষর সন্নিবেশ থেকে ছন্দের উৎপত্তি । বেদের সাতটি ছন্দ । যথা - 
গায়ত্রী (২৪ অক্ষর) , উষ্ণিক (২৮ অক্ষর) , অনুষ্টুপ (৩২ অক্ষর) , বৃহতী (৩৬ অক্ষর) , পঙ্ক্তি (৪০ অক্ষর) , ত্রিষ্টুপ (৪৪ অক্ষর) , জগতী (৪৮ অক্ষর) ।। সংহিতা, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ, প্রাতিশাখ্যের শেষে , সামবেদের নিদান সূত্রে , সাংখ্যায়ন শ্রৌতসূত্রে , বিভিন্ন অনুক্রণিকাতে ছন্দের উল্লেখ আছে ।। ছন্দসূত্রের রচয়িতা হলেন পিঙ্গল মুনি ।।

৬ -জ্যোতিষ:  বৈদিক যজ্ঞের প্রয়োজনে তিথি নক্ষত্রের সেই বিশেষ অবস্থান বিচার যে শাস্ত্রে বর্ণিত তাকে "জ্যোতিষ" বলে । অহোরাত্র পক্ষ,  মাস , ঋতু , অয়ন , সংবৎসর , গণনা এবং রাশি-নক্ষত্র , অমাবস্যা , পূর্ণিমা, সংক্রান্তি প্রভৃতির বিস্তারিত আলোচনা জ্যোতিষ এর বিষয় ।। লগধের বেদাঙ্গ জ্যোতিষ, পরবর্তীতে গর্গ্য মুনির গ্রন্থ গুলি এই জ্যোতিষ এ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।।

                           ॐ নমস্কার ॐ

                      Writer : Arya Rishi


Friday 13 April 2018

মনুসংহিতা ও সমীক্ষা


 এই নিবন্ধটি একটি দর্পণের মত । যা অনেক সত্যকে সামনে তুলে আনবে ।।
 

 মনুসংহিতা হলো হিন্দুসমাজের মধ্যে অন্যতম বিতর্কযুক্ত গ্রন্থ । কিন্তু আমাদের মনে মনুসংহিতা নিয়ে যে ধারণা ঢোকানো হয়েছে , আমরা যা শুনি , আমরা যা জানি মনুসংহিতার সম্পর্কে , তা কখনোই বাস্তব নয় , মনুসংহিতা নিয়ে আমাদের এই ধারণা পোষণ এর কারণ হলো মনুসংহিতা গ্রন্থ টি না পড়া । 
মনুস্মৃতি কে বিচার করার আগে আমাদের জানতে হবে মনুস্মৃতি তথা স্মৃতিশাস্ত্র সম্পর্কে ।।

মূলত মনুসংহিতা তথা অন্যান্য সংহিতা গুলি হলো আইনশাস্ত্র বা বিধান , যদিও বর্তমান ল (law) আর এই স্মৃতিশাস্ত্র এর মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য অবশ্যই  বিদ্যমান । আইন বা বিধান রচিত হয় বিশেষজ্ঞ মানুষ দ্বারা , আইন বা বিধান যেসময় রচিত হয় , সেসময় বিধান-রচয়িতাদের উদ্দেশ্য থাকে তৎকালীন পরিস্থিতি বিচার করে , সেই সময়ে সমাজ রক্ষা করা , দুর্বল ও স্ত্রী কে রক্ষা করা ও সমাজকে সেই সময়ের সমস্যা থেকে সুরক্ষিত রাখা ।। ঐতিহাসিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে "যীশুর জন্ম এর চারশো বছর থেকে দুশো বছরের মধ্যে মনুস্মৃতি এর বর্তমান মূল কাঠামোটি রুপ পেয়েছে "

আমরা যেই সংহিতার বিষয়তে কথা বলছি, তা আজ থেকে অন্তত পক্ষে তিন হাজার বছর আগের একটি আইন সংহিতা । সেই সময়ের ভারতবর্ষের সমস্যা , সেই সময়ের মানুষের চিন্তাধারা , সেই সময়ের অপরাধমনস্কতা  আর আজকের ভারতবর্ষের সমস্যা, মানুষের চিন্তাধারা , অপরাধমনস্কতা এক নয় । তাই আজকের পরিস্থিতি থেকে মানসিক দিক দিয়ে বিচার করলে কখনোই মনুস্মৃতির মূল দর্শন বোঝা অসম্ভব ।। আমরা যদি ভারতের সংবিধান দেখি , দেখতে পাবো আমাদের সংবিধান ২৬শে নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে বিধিবদ্ধ হয় , তারপরের ৭৯ বছরে বারংবার ভারতের সংবিধান পরিবর্তিত হয়েছে ( এখানে ভারত উদাহরণ মাত্র, বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সংবিধান এর ইতিহাস দেখলেও এই পরিবর্তন এর ইতিহাস অবশ্যই পাওয়া যাবে , শুধু কম আর বেশি, এই যা পার্থক্য,  যদিও এই কমবেশির পিছনেও কারণ আছে,  যা এখানে বলা নিষ্প্রয়োজন ) । এখন , এই সংবিধান যে পরিবর্তন হচ্ছে, কেন হচ্ছে ? হচ্ছে কারণ সংবিধান প্রণেতারা যেই দৃষ্টিভঙ্গি ও সমস্যাকে সমাধান করার জন্য সংবিধানের ধারা বানিয়েছেন,  তার পরিবর্তন ঘটছে নিয়ত, তাই তার বিধান এর ও পরিবর্তন ঘটছে । আজ থেকে ৭৯ বছর আগের সমস্যা আর দৃষ্টিভঙ্গি যদি বহুবার পরিবর্তিত হয়ে থাকে , তবে তিন হাজার বছর আগের সমস্যা আর দৃষ্টিভঙ্গি কে আজকের পরিস্থিতি ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করা কতটা যুক্তিসংগত ? 
             পাঠকদের কাছে প্রশ্ন টি রইল

শ্রুতি (বেদ) ও স্মৃতির মধ্যে সবথেকে বৃহৎ পার্থক্য-  যেমন যেমন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে , দেশের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে , সমস্যা , মানুষের জীবনধারার সাথে সাথে স্মৃতির বিধান পাল্টে যায় অর্থাৎ স্মৃতি পরিবর্তনশীল , কিন্তু শ্রুতি অপরিবর্তনীয় । এছাড়াও স্মৃতির রচয়িতা মনুষ্য  কিন্তু শ্রুতি হলো অপৌরুষেয়  ।।

স্মৃতিসমূহের মধ্যে বিরোধ কেন ?
এখানে আমরা প্রধান তিনটি স্মৃতি নিয়েই আলোচনা করব, তাহাতেই পাঠকবর্গ এই বিরোধের কারণ বুঝতে পারবেন কারণ ২০ টি স্মৃতির ক্ষেত্রেই এক ই কারণ প্রযোজ্য ।। এখানে যে তিনটি স্মৃতি নিয়ে আলোচনা করা হবে , তা হল মনুস্মৃতি , যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি  এবং পরাশর স্মৃতি প্রচলিত তথ্যানুসারে  মনুসংহিতার ৭০০-৮০০ বছর পর যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা রচিত হয়েছিল,  তাই উভয় সময়ের মধ্যেকার পরিস্থিতি , সমাজব্যবস্থা , জীবনধারা , মানুষের চিন্তাধারা সব ই আলাদা , তাই উভয় সময়ে রচিত বিধান ও আলাদা । আবার পরাশর সংহিতার মূল বৈশিষ্ট্য হল আপৎধর্ম, আপৎকালীন অবস্থাতে উচিত/অনুচিতের বিধানের উপর এই সংহিতাতে জোর দেওয়া হয়েছে ।।

সিদ্ধান্ত: - পরিস্থিতি , সমাজব্যবস্থা , জীবনধারা , মানুষের চিন্তাধারা এর ভিন্নতা , সংহিতাকার দের সংহিতা রচনার আদর্শের ও প্রয়োজনের ভিন্নতা থেকে এই তথাকথিত স্ববিরোধীতা আমাদের মনে হয় কিন্তু এই বিধানগুলি বাস্তবে স্ববিরোধীতা নয় , এগুলি হলো বাস্তববাদী চিন্তা ও সিদ্ধান্তের প্রকাশ যা বিধান রচয়িতার জন্য আবশ্যক ।।

                       তথাপি কেন মনুস্মৃতি ?

স্মৃতির বিধান পরিবর্তনশীল,  তবুও কেন আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে রচিত মনুসংহিতার গুরুত্ব থাকবে ? এই প্রসঙ্গ টা বুঝতে গেলে আমাদের সামান্য পাশ্চাত্য দর্শনের প্রসঙ্গ আলোচনা করতে হবে ।। প্লেটো বলেছিলেন " বিস্ময় ই দর্শনের জনক " ।। কারণ প্লেটো যেসময়ের দার্শনিক ছিলেন,  তখন পাশ্চাত্য দর্শন এর চিন্তাধারা ছিলো খুব ই অনুন্নত,  সেই সমাজের এক প্রতিনিধি হিসেবে সেই চিন্তাধারার প্রতিধ্বনি ছিল এই অনুন্নত মতবাদ টি কারণ তখন মানুষ SUBSTANCE জানত না , THE THEORY OF CAUSALITY জানতো না REALISM & IDEALISM এর স্পষ্ট ধারণাও তাদের ছিল না ।। এর ও প্রায় ২০০০ বছর পর ডেকার্ট বলেছেন "সংশয় ই দর্শনের জনক " কারণ সেইসময়ে মানুষ SUBSTANCE , THE THEORY OF CAUSALITY, REALISM & IDEALISM এই বিষয়গুলি সেই সময় অনেক স্পষ্ট । আর আজ আমরা জানি এইভাবে কোনো বিশেষ কিছু কে দর্শনের জনক বলা অনুচিত কারণ এতে জ্ঞান তত্ত্ব এর ক্ষেত্রে অনবস্থা দোষ ঘটে যায় কিন্তু প্লেটোর মত মেনে মানুষ যদি বিস্ময়ে বিস্মিত না হয়ে দর্শন চিন্তা শুরু করত তবে কখনোই ডেকার্ট সেই মঞ্চ পেতেন না যার উপর দাঁড়িয়ে তিনি বলতে পারেন 
"সংশয় ই দর্শনের জনক " ।। সংশয়ে সংশয়যুক্ত না হলে মানুষ কখনোই আবার আজকের সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারতো না , এটা যৌক্তিক সত্য । ঠিক একই ভাবে মনুস্মৃতির বিধানগুলি না থাকলে পরবর্তীকালে বিধান সকল তৈরী ই হওয়ার সুযোগ ই পেতো না এবং সমাজ আজকের পরিস্থিতিতে আসতে পারত না , যদি না সেই সময়ে সমাজকে স্থিতিশীল করা যেতো । এছাড়াও বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি দেখলেই দেখা যাবে  যে মনুর বিধান গুলি কতটা বাস্তবসম্মত ও মানবতাবাদ যুক্ত ।। তাই আজ ও মনুস্মৃতি সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক ।।

মনুস্মৃতির গুরুত্ব ও বিশ্বে মনুস্মৃতির প্রতিষ্ঠা :- http://aryamantavya.in/manu-aur-manu-smriti-ki-vishwa-men-pratishtha/  

এটি একটি গবেষণামূলক নিবন্ধ । লিখেছেন সংস্কৃত গবেষক ও অধ্যাপক ডঃ সুরেন্দ্র কুমার , এই লিঙ্কে গবেষণালব্দ্ধ প্রমাণের দ্বারা দেখানো হয়েছে , মনুস্মৃতির গুরুত্ব ও বিশ্বে মনুস্মৃতির প্রতিষ্ঠা ।


                          মনুস্মৃতি ও বৈষম্য 

মনুস্মৃতির আধার হল বৈষম্য  । মনুর মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি হলো সব মানুষ সমান নয় , সমান হতেও পারবে না জাগতিক স্তরে , বৈষম্য আছে ও থাকবে , একমাত্র আধ্যাত্মিক স্তরে গিয়েই সকলে সমান হবে । অন্য দিকে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যারা মনুর লক্ষ্য ছিল যারা নিম্নস্তরে আছে যোগ্যতাগত ভাবে অর্থাৎ শুদ্র , তাদেরকে কিভাবে ব্রাহ্মণ এর স্তরে উন্নীত করা যায় । বিশ্বজয়ী বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ ও মনুর কথার প্রতিধ্বনি করেই বলেছিলেন আমাদের উদ্দেশ্য হল শুদ্রকে ব্রাহ্মণের স্তরে উন্নীত করা (ভারতে বিবেকানন্দ গ্রন্থ) ।।

               মনুর বৈষম্য যথার্থ নাকি অযথার্থ

সত্য বরাবর ই সত্য , বাস্তব ও সত্য সর্বদা মিষ্ট নাও হতে পারে , তা বলে বাস্তব কে ত্যাগ করা অসম্ভব । হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় , অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দের সাথে যশোর বিশ্ববিদ্যালয় , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় , গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দের মধ্যে সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকবেই , অধ্যাপক বা ডাক্তারের সাথে রিক্সাওয়ালা বা বাস কন্ডাক্টর এর সামাজিক বৈষম্য থাকবেই,  ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ও ক্লার্ক এর মধ্যে সামাজিক বৈষম্য থাকবেই , PhD ডিগ্রিধারী ও ক্লাস টেন পাশ করা ছাত্রের সামাজিক বৈষম্য থাকবেই ।। এরকম ভাবে সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্রে,  প্রত্যেক স্তরে সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ভাবে বৈষম্য ছিল , বৈষম্য আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে , এটাই সত্য । কারোর ভালো লাগতেও পারে অথবা কারোর ভালো না ও লাগতে পারে,  তথাপি সত্য অপরিবর্তনীয় । একজন সংহিতাকার হিসেবে বাস্তববাদী মনু তাই যথাযথ ভাবেই বৈষম্য কে রেখেছেন এবং তা অবশ্যই যোগ্যতার ভিত্তিতে যথার্থ ভাবে ।। এই বৈষম্য ই জগতের নিয়ম ।।।।

                               মনু ও শুদ্র
মনুস্মৃতিতে আজ থেকে ৩০০০ বছর আগে যে দৃষ্টিভঙ্গিতে শুদ্র , বৈশ্য , ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় নির্ধারণ করেছেন , তা আগে আমাদের জানতে হবে









সিদ্ধান্ত-  কর্মের ভিত্তিতে এই ব্রাহ্মণ,  ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র নির্ধারিত হয় এবং শুদ্র স্তর থেকে মানুষ ব্রাহ্মণের স্তরে অবশ্যই উন্নীত হতো ।।

শুদ্রদের প্রতি মনুর দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাক 




অর্থাৎ শুদ্র যা কিছুই করুক কোনোটাতেই পাপ হয় না । এক্ষেত্রে মনুর নিয়ম খুব স্পষ্ট , তুমি যদি ধর্ম মানতে চাও তবে মানো , না মানতে চাও , তবে না মানো , ধর্ম না মানতে চাইলে তুমি যা খুশি করো, যা খুশি আহার করো , কেউ বাধা দেবে না । কিন্তু তোমার কাছ থেকে যেমন সামাজিক ধর্ম কিছু চাইছে না তেমন তুমিও সামাজিক ধর্ম এর কাছ থেকে কিছু চাইবে না , মদ খাবো , সীমাহীন ফুর্তি করব আবার ধর্মাচরণ ও করব , ধর্মীয় মর্যাদা ও লাভ করব , দুটো একসাথে অসম্ভব । যেমন এখন যারা ছাত্র, তাদের যদি সঠিক ভাবে পাশ করতে হয় , তবে নিয়মনিষ্ঠা মেনে পড়াশোনা করতে হবে । সারাবছর পড়াশোনা করব না , অন্যান্য জিনিস করব আবার পাশ ও করব পরীক্ষাতে , এটা হতে পারে না ।। এই সহজ কথাটাই মনু বলেছিলেন আর প্রাচীন ভারতবর্ষে এরকম প্রচুর উদাহরণ দেওয়া যায় যে যোগ্যতার ফলে অনেকে শুদ্র স্তর থেকে ব্রাহ্মণের স্তরে উন্নীত হয়েছিলেন , বাস্তবে ব্রাহ্মণ,  ক্ষত্রিয় , বৈশ্য ও শুদ্র এই সব স্তর ব্যাক্তির যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল ।।

মনু কি শুদ্র তথা দলিত বিরোধী ছিলেন ?
জেনে নিন গবেষক দের মতামত 
👇        👇        👇       👇       👇       👇          👇






                         মনুস্মৃতি ও প্রক্ষিপ্ত 
মনু স্মৃতি হলো একটি প্রক্ষিপ্ত গ্রন্থ এবং মনুস্মৃতি যে প্রক্ষিপ্ত তার নির্ধারণ করব কি করে ?



সিদ্ধান্ত- মনুসংহিতা হলো বেদের ই সিদ্ধান্ত । তাই মনুস্মৃতিতে যদি এমন কিছু পাওয়া যায়, যা বেদের কথার সাথে সাংঘর্ষিক,  তবে বুঝতে হবে এই অংশ অবশ্যই প্রক্ষিপ্ত ।






এটি মনুসংহিতার উপর একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ,  যেখানে গবেষণালব্দ্ধ প্রমাণের দ্বারা মনুসংহিতার প্রক্ষিপ্ত কে চিহ্নিত করা আছে ।।

পাঠকদের জন্য বিশুদ্ধ মনুস্মৃতির উপর গবেষণালব্দ্ধ গ্রন্থটির লিঙ্ক দেওয়া হচ্ছে , যাতে পাঠকগণ নিজেরাই প্রক্ষিপ্ত ও যথার্থতা নির্ণয় করতে পারেন 👉 https://archive.org/details/VishuddhManuSmriti3Of3 
এখানে বেদের সাথে সামঞ্জস্যতা বিচার করে মনুসংহিতার প্রক্ষিপ্ত শ্লোক গুলি নির্ণয় করা হয়েছে এবং বর্তমানে ভারতে প্রক্ষিপ্ত মনুসংহিতার তুলনায় এই বিশুদ্ধ মনুসংহিতা বা অপ্রক্ষিপ্ত মনুসংহিতা বেশি প্রচলিত। এবার দেখে নেওয়া যাক বিতর্কিত মনু সংহিতার তথ্যগুলো বিশুদ্ধ মনুসংহিতার সাপেক্ষে প্রক্ষিপ্ত না অপ্রক্ষিপ্ত। 

(১) মনুসংহিতা ৯/১৮ * নারীরা ধর্মজ্ঞ নয়, এরা মন্ত্রহীন এবং মিথ্যার ন্যায় অশুভ, এই শাস্ত্রীয় নিয়ম। 
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(২) মনুসংহিতা ৫/১৫৪ * স্বামী দুশ্চরিত্র, কামুক বা নির্গুণ হলেও তিনি সাধ্বী স্ত্রী কর্তৃক সর্বদা দেবতার ন্যায় সেব্য। 
→ বিশ্লেষণ  
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(৩) মনুসংহিতা ৫/১৬৩ - ১৬৪ * কোনো নারী (স্ত্রী) যদি স্বামীকে অবহেলা করে, ব্যভিচারিণী বলে সংসারে তো নিন্দিত হবেই, সাথে সাথে যক্ষা, কুষ্ঠ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হবে। শুধু তাই নয় পরজন্মে শৃগালের গর্ভে জন্ম নেবে সেই নারী।
→ বিশ্লেষণ
বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে ১৬৩ নং শ্লোকটি উপস্থিত থাকলেও ১৬৪ নং শ্লোকটি অনুপস্থিত, সুতরাং এই ১৬৪ নং শ্লোকটি প্রক্ষিপ্ত। ১৬৩ নং শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে -
পতি হিত্বাৎপকৃষ্টং স্বমুৎকৃষ্টং যা নিষেবতে।
নিন্দ্যৈব সা ভবেল্লোকে পরপূর্ব্বেতি চোচ্যতে।।
[বিবাহ হবার পরে তুলনাত্মক রূপে] কোনো ভালো ব্যাক্তি পাওয়ার সম্ভবনা হওয়ার পর (যা স্বম অপকৃষ্টং পতি হিত্বা উৎকৃষ্টং পতি নিষেবতে) যে স্ত্রী নিজঃ নিম্নোক্ত কুল তথা তার গুণ সম্পন্ন পতি কে ছেড়ে দিয়ে, অন্য উত্তম কুল অথবা গুণ সম্পন্ন পতির সেবন করে (সা) সে (লোকে নিন্দ্যা+এব ভবেত) লোকেদের থেকে নিন্দা প্রাপ্ত করে (চ) এবং (পরপূর্বা+ইতি উচ্যতে) প্রথমে যে অপরের পত্নী ছিলো, তার বিষয়ে ব্যাঙ্গ করা হয়।। 







(৪) মনু সংহিতা ৫/১৫৫ * স্ত্রীদের জন্য স্বামী ছাড়া পৃথক যজ্ঞ নেই, স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনো ব্রত বা উপবাস নেই, শুধু স্বামীর সেবার মাধ্যমেই নারী স্বর্গে যাবে। 
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(৫) মনু সংহিতা ৫/১৫৭ * স্ত্রী সারা জীবন ফলমূল খেয়ে দেহ ক্ষয় করবেন কিন্তু অন্য পুরুষের নামোচ্চারণ করবেন না।
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(৬) মনু সংহিতা ৫/১৬৮ * স্ত্রী মারা গেলে দাহ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে স্বামী আবার বিয়ে এবং অগ্ন্যাধ্যান করবেন।
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(৭) মনু সংহিতা ২/৬৭ * পতিসেবা, গুরুগৃহে বাস (স্বামীগৃহে বাস), গৃহকর্ম পরিচালনা করা এবং অগ্নিদেবকে সন্তুষ্ট রাখাই একজন সতী-সাধ্বী স্ত্রীর কর্তব্য।
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(৮) মনু সংহিতা ৯/৯৬ * সন্তান জন্ম দেওয়া নারীর কর্তব্য এবং সন্তান উৎপাদনার্থে পুরুষ সৃষ্টি হয়েছে।
→ বিশ্লেষণ
প্রজনার্থং স্ত্রিয়ঃ সৃষ্টাঃ সন্তানার্থ চ মানবাঃ।
তস্মাৎ সাধারণো ধর্ম্মঃ শ্রুতৌ পত্ন্যা সহোদিতঃ।।
(প্রজনার্থ স্ত্রিয়ঃ সৃষ্টাঃ) গর্ভধারণ করে সন্তান কে জন্ম দেওয়ার কর্মের জন্য স্ত্রীদের রচনা করা হয়েছে (চ) এবং (সন্তানার্থ মানবাঃ) সন্তানার্থে গর্ভাধান কর্মের জন্য পুরুষের রচনা হয়েছে [উভয়ে এক অপরের পূরক হওয়ার কারণে] (তস্মাত) এইজন্য (শ্রুতী) বেদে (সাধারণঃ ধর্মঃ) সাধারণ থেকে সাধারণ ধর্মকার্যের অনুষ্ঠান (পত্ন্যা সহ+উদিতঃ) পত্নীর সঙ্গে করার বিধান করেছে।।









(৯) মনু সংহিতা ২/৬৬ * যে সকল নারী একদা বৈদিক মন্ত্র-শ্লোক পর্যন্ত রচনা করেছিলেন, তাদের উত্তরসূরীদের জন্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত - অমন্ত্রক। 
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(১০) মনু সংহিতা ১১/৩৭ * কন্যা, যুবতী, রোগাদি পীড়িত ব্যক্তির হোম নিষিদ্ধ এবং করলে নরকে পতিত হয়।
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(১১) মনু সংহিতা ৫/১৫৬ * সাধ্বী নারী কখনো জীবিত অথবা মৃত স্বামীর অপ্রিয় কিছু করবেন না। 
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(১২) মনু সংহিতা ৯/২২ * নারীর কোনো গুণ নেই, নদী যেমন সমুদ্রের সাথে মিশে লবনাক্ত (সমুদ্রের গুণপ্রাপ্ত) হয়, তেমনই নারী বিয়ের পর স্বামীর গুণযুক্ত হন।
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। 

(১৩) মনু সংহিতা ৯/২ * স্ত্রীলোকদের স্বামীসহ প্রভৃতি ব্যক্তিগণ দিনরাত পরাধীন রাখবেন, নিজের বশে রাখবেন।
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।

(১৪) মনু সংহিতা ৯/৩ * স্ত্রীলোককে পিতা কুমারী জীবনে, স্বামী যৌবনে ও পুত্র বার্ধক্য রক্ষা করে, (কখনও) স্ত্রীলোক স্বাধীনতার যোগ্য নয়। 
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।

(১৫) মনু সংহিতা ২/২১৩ * নারীর স্বভাবই হলো পুরুষদের দূষিত করা।
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।

(১৬) মনু সংহিতা ৯/১৪ * যৌবনকালে নারী রূপ বিচার করে না, রূপবান বা কুরূপ পুরুষ মাত্রেই তার সঙ্গে সম্ভোগ করে।
→ বিশ্লেষণ 
মনুসংহিতার উক্ত অংশটি বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং মনু সংহিতার এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।


বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত  
মনুসংহিতার উক্ত অংশগুলি এই জন্য প্রক্ষিপ্ত কারণ বেদের সাথে এর সামঞ্জস্যতা নেই এবং এগুলি মনুর সাথেই পরস্পর বিরোধী। মনু তার সংহিতা তে নারী কল্যাণের বহু উপায় উল্লেখ করে গেছেন , মনুসংহিতাতে মনু নারী কল্যাণের বহু উপায় যে করে গেছেন , তা পাঠকগণ বিশুদ্ধ মনুসংহিতা পড়লেই বুঝবেন পাঠকগণ , বিশুদ্ধ মনুসংহিতার এক-তৃতীয়াংশ জুড়েই নারীকল্যাণ এর কথা বলা আছে , যেহেতু নিবন্ধ এর বিষয় নয় , তাই ঐসকল শ্লোক গুলি দেওয়া হলো না ।।
মনুস্মৃতি কি প্রক্ষিপ্ত ? গবেষণালব্দ্ধ প্রমাণ দেখুন 👉 https://www.google.co.in/url?sa=t&source=web&rct=j&url=http://aryamantavya.in/kya-manu-smriti-men-prakshep-hein/&ved=2ahUKEwjj3trzrrfaAhWIQo8KHdM4CAYQFjAAegQIBxAB&usg=AOvVaw1LF2ncjjL9eNycKREMIKOK 

       মনুসংহিতার ২/২১৩ ও ২/২১৪ সমীক্ষা 

स्वभाव एष नारीणां नराणां इह दूषणम् ।अतोऽर्थान्न प्रमाद्यन्ति प्रमदासु विपश्चितः ।। 2/213 মনুস্মৃতি

অর্থ-  ইহলোকে (পৃথিবীতে) মনুষ্যদিগকে দূষিত করাই স্ত্রী দের স্বভাব,  এই জন্য পন্ডিতেরা স্ত্রীলোক সম্পর্কে অনবধান হয়েন না । 

अविद्वांसं अलं लोके विद्वांसं अपि वा पुनः ।प्रमदा ह्युत्पथं नेतुं कामक्रोधवशानुगम् ।2/214

অর্থ - ইহলোকে কোনো পুরুষ,  আমি বিদ্বান ও জিতেন্দ্রিয় মনে করে স্ত্রীলোকের সন্নিধানে বাস করিবে না , যেহেতু বিধান ই হোক বা অবিধান ই হোক , দেহধর্মবশতঃ কাম-ক্রোধের বশীভূত পুরুষ  কে কামিনাগণ  অনায়াসে উন্মার্গগামী করিতে সমর্থ হয় ।।

বিশ্লেষণ 👉 এখানে মনু কোনো বিধান দেন নি , দিয়েছেন এক নৈতিকতার পাঠ কারণ তিনি বলেই দিয়েছেন "যেহেতু বিধান ই হোক বা অবিধান ই হোক" ।। এখানে তিনি সকল পুরুষের কথা ও বলেন নি , সকল মহিলা দের কথা ও বলেন নি , বলেছেন কিছু নির্দিষ্ট চরিত্রের নারী-পুরুষের কথা , মনু বলেছেন 👉 
দেহধর্মবশতঃ কাম-ক্রোধের বশীভূত পুরুষ কে কামিনাগণ অনায়াসে উন্মার্গগামী করিতে সমর্থ হয় ।। এখন সত্য তিক্ত হলেই কি তাকে বর্জন করা উচিত ? মনুর এই নৈতিকতার পাঠ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবোচিত , তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো আজকের দিনে "HONEY TRAPPING" । বিশ্বে কোনো দেশ নেই আজ , যে দেশ এই "HONEY TRAPPING" এর জন্য চিন্তিত নয় এবং এই 
"HONEY TRAPPING"  রোধে আইন করেনি বা ব্যবস্থা নেয়নি ।। এখন "HONEY TRAPPING" ঘটতে পারে , বিভিন্ন দেশের সরকার এই TRAP রুখতে ব্যবস্থা নিতে পারে , আর এইরকম ঘটনা ও পরিস্থিতির উদ্ভব ই যাতে না হয় , সেই বিষয়ে মনু বাস্তবসম্মত বিধান দিলেই তা মানবতা ও নারী বিরোধী হয়ে যায় ? 
             যুক্তিবাদী পাঠকদের কাছে প্রশ্নটি রইল

HONEY TRAPPING সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কে প্রবেশ করুন

                  
      স্মৃতি ও শ্রুতির মধ্যে বিরোধ হলে কি করণীয় ?





या वेदबाह्याः स्मृतयो याश्च काश्च कुदृष्टयः ।सर्वास्ता निष्फलाः प्रेत्य तमोनिष्ठा हि ताः स्मृताः ।। 12/95 মনুস্মৃতি

অর্থ - যে স্মৃতি বেদমূলক নয়, কেবল দৃষ্টার্থ , যেমন চৈত্যবন্দনে স্বর্গ হয়, এইরুপ যে স্মৃতি এবং যে সকল স্মৃতি অসৎ তর্কস্বরুপ অর্থাৎ দেবতা নাই এবং অপূর্ব্বাদি নাই,  এই প্রকার চার্বাকাদিসম্মত , তমোগুণে উৎপন্ন,  পরলোকে ফলদায়ক নহে , পরন্তু ইহা দ্বারা নরক ফললাভ হয় ।।

उत्पद्यन्ते च्यवन्ते च यान्यतोऽन्यानि कानि चित् ।तान्यर्वाक्कालिकतया निष्फलान्यनृतानि च ।।12/96 মনুস্মৃতি 
অর্থ - যে সকল শাস্ত্র বেদমূলক নয়, অন্য দৃষ্টমূলক , তাহা উৎপত্তিমাত্রেই বিনষ্ট হয় , বেদমূলকত্ব প্রযুক্ত স্মৃত্যাদির প্রামাণ্য জানিবে , ঐ সকল শাস্ত্র  (যা বেদানুকূল নয়) তা নিস্ফল ও মিথ্যা  জানিবে 









सर्वं तु समवेक्ष्येदं निखिलं ज्ञानचक्षुषा ।श्रुतिप्रामाण्यतो विद्वान्स्वधर्मे निविशेत वै ।। 2/8 মনুস্মৃতি

অর্থ - শাস্ত্র সকল জ্ঞান চক্ষুর্দ্বারা বিশেষরুপে পর্যালোচনা করিয়া বিদ্বানেরা বেদমূলক কর্তব্য ধর্ম অবগত হইয়া তাহার অনুষ্ঠান করবেন ।




अर्थकामेष्वसक्तानां धर्मज्ञानं विधीयते ।धर्मं जिज्ञासमानानां प्रमाणं परमं श्रुतिः । । 2/13 মনুস্মৃতি

অর্থ - ধর্ম জিজ্ঞাসু ব্যাক্তির নিকট প্রকৃষ্ট প্রমাণ বেদ , যেহেতু বেদ ও স্মৃতির অনৈক্যে বেদের মত ই গ্রাহ্য হয় ।।






श्रुतिस्मृतिपुराणानां बिरोधो यत्र दृश्यते ।
तत्र श्रौतं प्रमाणन्तु तयोर्द्बेधे स्मृतिर्ब्वरा ।। 1/4 ব্যাস সংহিতা 
অর্থ - যেখানে স্মৃতি , শ্রুতি (বেদ) ও পূরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে শ্রুতিকথিত (বেদ নির্দেশিত) বিধিই বলবান । 

সহজ সিদ্ধান্ত -  শ্রুতি (বেদ) এর সাথে যদি কোনো স্মৃতি বা পূরাণ বা অন্যান্য কোনো গ্রন্থের কোনো মতের অমিল দেখা যায় , তা তৎক্ষণাৎ পরিত্যাজ্য , এটাই শাস্ত্র এর সিদ্ধান্ত ।।

WRITER - ARYA RISHI 







“ড. শিব শক্তি নামক কাল্পনিক চরিত্র ! একটি ইসলামিক তাকিয়ার নমুনা”

                                ॐ    “ সম্মানিত পাঠক গণ আপনারা হয়তো অনলাইনে বহু ইসলামিক গ্রুপ , পেজ এসব স্থানে এই শিবশক্তি সরূপজী...

সব্বোর্চবার পঠিত