Wednesday 13 September 2017

“জানেন বিশ্বের সর্ববৃৃহৎ মন্দির কোনটি এবং এর আদ্যোপান্ত ? পড়ুন তবে”


       ★ ছবিতে যে স্থাপনাটি দেখছেন সেটিই হল পৃথিবীর বৃহত্তম মন্দির যার নাম "অ্যাংকর  ভাট " ৷ মূলত "অ্যাংকর ভাট" অর্থ "শহরের /নগরের  মন্দির"৷ " অ্যাংকর " শব্দটি এসেছে  নকর  শব্দ হতে, যা আসলে সংস্কৃত শব্দ  নগর   এর অপভ্রংশ। আর "ভাট" হল খ্মের ভাষার  শব্দ  যার অর্থ মন্দির।  এটি প্রধানত শ্রী বিষ্ণু দেবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ কৃৃত মন্দির।

    ★ পরিচিতি:-   অ্যাংকর ভাটে খ্মের মন্দির নির্মাণ কৌশলের দুই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে - টেম্পল মাউন্টেন বা পাহাড়ি মন্দির ধাঁচ, ও গ্যালারি মন্দির ধাঁচ। এটি হিন্দু পুরাণের দেব-দেবীদের বাসস্থান মেরু পর্বতের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে।  প্রাচীন মন্দিরটিকে চতুর্দিকে ঘিরে রয়েছে পরিখা (অর্থাৎ সুরক্ষার জন্য দূর্গ )  ও ৩.৬ কিমি দীর্ঘ প্রাচীর। ভিতরে ৩টি আয়তাকার গ্যালারি বা বেদি আকৃতির উঁচু এলাকা রয়েছে  ৷  অ্যাংকর ভাট আজও জগতের অন্যতম ধর্মস্থান বলে স্বীকৃত। উত্তর-পশ্চিম কম্বোডিয়ার অ্যাংকর শহরে বিখ্যাত এ মন্দিরটি অবস্থিত। অ্যাংকর ভাট মন্দিরের নির্মাণকার্য শুরু হয় ১২শ  শতাব্ধীতে  প্রথমভাগে, কম্বোডিয়ার খেমার হিন্দু রাজা ২য় সূর্যবর্মণ  রাজত্বকালে (১১১৩-১১৫০)।  মন্দিরটির আরাধ্যদেবতা ছিলেন শ্রী বিষ্ণু । এটি "সূর্যবর্মণের" মূল মন্দির ও রাজধানী হিসাবেও ব্যবহৃত হতো। তবে মন্দিরের স্থাপনার সময়কার কোন লেখা বা সমসাময়িক কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় নাই বলে মন্দিরটির আদি নাম কী ছিল, তা অজ্ঞাত ৷৷


 চিত্র:- স্যাটেলাইট কতৃৃক তোলা মন্দিরের অবস্থান
   
       ★ ভৌগলিক অবস্হান  :- অ্যাংকর ওয়াটের অবস্থান কম্বোডিয়ার উত্তরে । অ্যাঙ্কর প্রদেশের রাজধানী হল সিয়াম রিয়াপ। অ্যাঙ্কর ছিল প্রাচীন খেমার সাম্রাজ্যের রাজধানী ৷   মন্দিরটি বর্তমান কালের সিয়াম রিয়াপ শহরের ৫.৫ কিমি. উত্তরে, এবং প্রাচীন রাজধানী শহর বাফুওন  এর সামান্য দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। রাজা সূর্যবর্মণের মৃত্যুর পর এর নির্মাণ কার্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এর দেয়ালের কিছু কারূকার্য অসমাপ্ত থেকে যায়। ১১৭৭ সালে অ্যাংকর শহরটি খ্মেরদের চিরাচরিত শত্রু "চামদের " হাতে পরাজিত ও লুণ্ঠিত হয়। এর পরে নতুন রাজা "৭ম জয়বর্মণ " রাজ্যটিকে পূনর্গঠিত করেন। তিনি অ্যাংকর ভাটের কয়েক কিমি উত্তরে অ্যাংকর  থোম  নামকরণ করে রাজধানী বায়ুন  নগরে প্রধান মন্দির স্থাপন করেন।

★ ঐতিহাসিক নিদর্শন :- অ্যাংকর ছিল প্রাচীন খেমার সাম্রাজ্যের রাজধানী। কম্বোডিয়ার অধিবাসীরা প্রধানত খেমার। নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে খেমার সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। খেমার সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল অ্যাংকর। অ্যাংকর শব্দটি সংস্কৃত নগর শব্দ থেকে উদ্ভূত। সংস্কৃত শব্দের পেছনে অবশ্য কারণ রয়েছে। বাণিজ্য ও অন্যান্য সূত্রে ভারতীয় বৈদিক ধর্ম কম্বোডিয়া অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল। খেমার জনগণও সাদরে সেই ধর্ম গ্রহণ করেছিল। আর সেটিই ছিল স্বাভাবিক। কেননা, এর আগে কম্বুজদেশায় (কম্বোডিয়ার পুরনো নাম) জনগণ ছিল সর্বপ্রাণবাদী। অর্থাৎ তারা হরসরংস এ বিশ্বাসী ছিল। অপরদিকে ভারতীয় বৈদিক ধর্ম বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কিছুটা ভিন্ন হলেও এর মূলে রয়েছে একেশ্বরবাদ  । দীর্ঘকাল ধরে কোনো মানবসংস্কৃতিই সর্বপ্রাণবাদী হয়ে থাকতে পারে না। মানবসংস্কৃতি সব সময়ই একেশ্বরবাদী ধ্যানধারণা গ্রহণ করে। মানবচেতনার বিকাশের জন্যই এমনটা ঘটে বলে মনে করা হয়। কম্বোডিয়াতেও তাই-ই হয়েছিল। সেখান থেকেই কম্বোডিয়ায় বৈদিক ধর্মের উত্থান। আর ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে খেমার রাজা এই বিখ্যাত মন্দিরটি নির্মাণ করেন।

★বৌদ্ধ আগ্রাসন :-  সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে কম্বোডিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন ঘটে। ফলে ১৪শ বা ১৫শ শতাব্দীতে অ্যাংকর ভাট বৌদ্ধ মন্দিরে পরিণত হয়, যা আজ পর্যন্ত বজায় আছে। অ্যাংকরের অন্যান্য মন্দিরের সাথে এর আরেকটি পার্থক্য হল - যদিও ১৬শ শতাব্দীর পরে এটি কিছুটা অবহেলিত হয়, তথাপি অন্যান্য মন্দিরের মতো এটি কখনোই পরিত্যক্ত হয় নাই। চারদিকে "পরিখা" থাকায় বন জঙ্গলের গ্রাস থেকে মন্দিরটি রক্ষা পায়। এসময় মন্দিরটি সূর্যবর্মণের মরণোত্তর উপাধি অনুসারে ""প্রিয়াহ  পিস্নুলোক " নামে পরিচিত ছিল। আধুনিক নামটি, অর্থাৎ অ্যাংকর ভাট নামটির ব্যবহার ১৬শ শতাব্দী হতে শুরু হয়।

★ মন্দিরটি নিয়ে নানা পরিভ্রাজকদের মতামত :- পশ্চিমা পরিব্রাজকদের মধ্যে এই মন্দিরে প্রথম আগমন ঘটে পর্তুগিজ ধর্মপ্রচারক আন্তোনিও দা মাগদালেনার । তিনি ১৫৮৬ সালে প্রথম এই মন্দির এলাকা ভ্রমণ করেন। তিনি লিখেছেন,

👉 ""এটি (মন্দিরটি) এমন অসাধারণ ভাবে নির্মিত যে, ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। সারা বিশ্বে এরকম আর কোন ভবন বা স্থাপনার অস্তিত্ব নাই। এখানে রয়েছে খিলান ও অন্যান্য কারুকার্য, মানুষের পক্ষে সম্ভাব্য সেরা সৃষ্টি।""

তবে পাশ্চাত্যে এই মন্দিরের কথা ছড়িয়ে পড়ে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ফরাসি অভিযাত্রী অনরি মৌহত  এর ভ্রমণকাহিনীর মাধ্যমে। তিনি লিখেছিলেন,

👉এই মন্দিরগুলির মধ্যে একটি (অ্যাংকর ভাট), সলোমনের মন্দিরকেও হার মানায়।মাইকেলেঞ্জেলোর মতোই কোন প্রাচীন শিল্পী এটি নির্মাণ করেছেন। আমাদের সবচেয়ে সুন্দর ভবন সমূহের সাথে এটি সমতূল্য। এটি এমনকী প্রাচীন গ্রিস বা প্রাচীন রোমের স্থাপনা গুলির চাইতেও অনেক বেশি রাজকীয়, সুন্দর। বর্তমানে এই দেশটি (কম্বোডিয়া এলাকা) যে বর্বরতার মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে, তার সাথে এই মন্দিরের বিশালতার ও সৌন্দর্যের এক বিশাল ফারাক রয়েছে।

অন্যান্য পাশ্চাত্যের পরিব্রাজকদের মতো মৌহত ও বিশ্বাস করতে পারেন নাই যে, খ্মেররাই এই মন্দির নির্মাণ করেছিল। তিনি ভুলক্রমে ধারণা করেন, মন্দিরটি রোম সাম্রাজ্যের সমসাময়িক। অ্যাংকর ভাটের প্রকৃত ইতিহাস উদঘাটিত হয় এখানকার স্থাপত্যশৈলী ও শিলালিপি হতে, যা মন্দিরের সমস্ত এলাকা পরিষ্কার করার পরে প্রকাশ পায়৷


★ মন্দির মর্যাদার নতুন মাত্রা   :- বর্তমানে অ্যাংকর ভাটের মন্দিরটি কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এটি দেশবাসীর গৌরব। ১৮৬৩ সালে প্রথম প্রবর্তনের পর থেকে কম্বোডিয়ার সব পতাকাতেই অ্যাংকর ভাটের প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে। সারা বিশ্বে এটিই একমাত্র ভবন যা কোন দেশের পতাকায় প্রদর্শিত হয়েছে।

★ বর্তমান অবস্থা :-বিংশ শতাব্দীতে অ্যাংকর ভাটের ব্যাপক সংস্কার সম্পন্ন হয়। এ সময় প্রধানত এর চারিদিকে গ্রাস করে নেয়া মাটি ও জঙ্গল সাফ করা হয়।গৃহযুদ্ধ ও খ্মের রুজ শাসনামলে ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকগুলিতে সংস্কার কার্য বাধাগ্রস্ত হয়। তবে অ্যাংকর ভাট এলাকায় পরে স্থাপিত মূর্তিগুলি চুরি যাওয়া ও ধ্বংস করে ফেলা ছাড়া মূল মন্দিরের খুব একটা ক্ষতি এসময় হয় নাই।

  👉 ১৯৯০ এর দশক হতে অ্যাংকর ভাটের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। এর সাথে সাথে শুরু হয় পর্যটনশিল্প এর বিকাশ । ভারতের পুরাতাত্তিক সংস্থা  ১৯৮৬ হতে ১৯৯২ সালের মধ্যে মন্দিরটিতে সংস্কারের কাজ করে।মন্দিরটি অ্যাংকর নামে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান   হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯২  সালে স্বীকৃত হয় , এতে করে মন্দিরের সংস্কারের জন্য অর্থায়ন ও কম্বোডিয়া সরকারের দ্বারা মন্দিরের সুরক্ষার কার্যক্রম সহজতর হয়েছে।

  👉 জার্মানির অপ্সরা সংরক্ষণ প্রকল্প এই মন্দিরের অপ্সরা ও দেবতাদের ছবি সংবলিত কারুকার্যমন্ডিত দেয়ালের নকশাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছে। সংস্থাটির সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রাকৃতিকভাবেই পাথর ক্ষয়ে যাওয়ায় দেবতামূর্তিগুলির ২০ শতাংশেরই খুব করুণ দশা। তার উপরে শুরুর দিকের সংরক্ষণকারীদের অনভিজ্ঞতার ফলেও অনেক ক্ষতি হয়েছে।সংস্কার কার্যের অন্যান্য দিকের মধ্যে রয়েছে ধসে যাওয়া অংশ মেরামত। যেমন, উপরের স্তরের পশ্চিম দিকের ২০০২ সাল থেকেই খুঁটি দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। জাপানি বিশেষজ্ঞরা ২০০৫ সালে উত্তর দিকের "পাঠাগার" মেরামত করেছেন।

“ড. শিব শক্তি নামক কাল্পনিক চরিত্র ! একটি ইসলামিক তাকিয়ার নমুনা”

                                ॐ    “ সম্মানিত পাঠক গণ আপনারা হয়তো অনলাইনে বহু ইসলামিক গ্রুপ , পেজ এসব স্থানে এই শিবশক্তি সরূপজী...

সব্বোর্চবার পঠিত